যদি তোমার যোগ্যতা থেকে থাকে!

তুমি অফিসে যাবে, তবেইতো বেতন পাবে এটাইতো স্বাভাবিক তাইনা? কিন্তু কেউ যদি বলে আমি চাকরী করবো, বেতনও নিবো কিন্তু অফিসে যেতে পারবোনা। বিষয়টা অস্বাভাবিক লাগেনা?

তুমিতো জানো, এই মুহুর্তে পৃথিবীর সেরা এবং মানুষের স্বপ্নের কোম্পানীগুলোর মধ্যে অ্যাপল এবং গুগল সবার উপরে। যেখানে চাকরী পাওয়া পাহাড় সমান অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ভাগ্যেরও ব্যাপার। আর এমন একটা কোম্পানীতে চাকরী পাওয়ার পরও, মানুষ যখন বলে আমি চাকরী করবো ঠিকই কিন্তু অফিসে যাবো। সে পাগল নয়, আত্মবিশ্বাসী আর ট্যালেন্টের জাদুকর।

ভাবুন তাদের আত্মবিশ্বাস আর যোগ্যতার লেভেল কত উপরে যে, অ্যাপল এবং গুগলও তাদের কাছে হার মেনে গিয়ে, টেকনিক্যাল পদ্ধতি অবলম্বন করে তাদের অফিসে আনার চেষ্টা করছে। চাকরী মানেই তোমাকে অফিস করতে হবে, তারপরও এসব কোম্পানীগুলো তাদের ফোর্স করতে পারছেনা, তাদের হারানোর ভয়ে, তাদের অধিকতর প্রয়োজনীতার কথা চিন্তা করে। ভাবুন যোগ্যতা থাকলে কি না করা সম্ভব।

বাধ্য হয়ে অ্যাপল কর্মীদের সপ্তাহে শুধু তিনদিন অফিস করার অনুরোধ করেছেন। সেই তিনদিন অফিস করার কথা বলাতে অ্যাপলের মেশিন লার্নিং ডিরেক্টর ইয়া গুডফেলোতো চাকরিই ছেড়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে টেক জায়ান্ট গুগল তাদের কর্মীদের অফিসে আনার জন্য ঘোষণা দিয়েছে, যে তাদের কর্মীরা সপ্তাহে শুধু দুদিন অফিসে আসলেই বিনামূল্যে একটি বৈদ্যুতিক স্কুটার পাবেন।

ভাবুন একবার, সপ্তাহে ছয়দিন অফিস করেও চাকরী রাখার জন্য বসকে কত তেল দিতে হয় আমাদের, পারলে শুক্রবারও অফিসে গিয়ে বসে থাকি! কত সস্তা আমাদের কাজ আর অভিজ্ঞতার ঝুলি! তাই এখনও সময় আছে, একটা তালিকা করুন, আপনি কি কি পারেন, আর কি কি পারেন না? এবার ভাবুন আপনার স্বপ্ন পুরণে কতগুলো ‘না পারা’ বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে? আর যেগুলো ভালো পারেন, সেগুলোকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়?

তবে অনেক সময় বসের বোকামী থেকেই যায়।কেননা আমরা যাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসি, সবচেয়ে বেশী ভরসা করি, তার অবহেলায়ই আমাদের সবচেয়ে বেশী দুর্বল করে দেয়। একটা দুশ্চিন্তা আর ভয় সারাক্ষন আমাদের ভেতরে বাসা বেধে থাকে। আমরা চিৎকার করি, কিন্তু সে ভয় থেকে বেড় হতে পারিনা।

ঠিক তেমনী, একজন বস যখন বাকাবকি করেন, তখন লজ্জা আর অপমানে কর্মীদের মনে একটা অপরাধবোধ আর ভয় কাজ করে, যে আসলেই আমি কিছু পারিনা, আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা। আর এই হতাশা আর ভয়ই সারাক্ষন তাকে জড়োসড়ো করে রাখে, সে জানা কাজগুলোও করতে পারেনা।

ভেবে দেখো বস, তুমি যখন কাউকে বকো, গালাগালি দেও, সে তার আশেপাশের দুচারজন নিয়ে সারাদিন এটা নিয়ে আলোচনা করতে থাকে। ভেতরে ভেতরে একটা ঘৃনা, লজ্জা আর ভয় তার ভেতরে ভালো কিছু কখনওই জন্ম নেয়না, বরং যেগুলো থাকে সেগুলোও ব্যর্থ আর ভুল মনে হয়।

বরং এটা ভেবে দেখো, তুমি যদি সকালবেলা তোমার কলিগদের সাথে হাসি দিয়ে কথা বলো, ভালো ব্যবহার করো, বিভিন্ন উৎসবে ছোট্ট ছোট্ট গফট দেও, একটা ভালো সম্পর্ক রেখো, তার মনের কথাগুলো শুনতে চাও আর সেও যেন নিজের ইচ্ছায় তার মনের কথাগুলো তোমাকে নিরাপদে শেয়ার করতে পারে, দেখবে সে কখনও তোমাকে ঢুবাবেনা। জীবন বাজী রেখে তোমাকে রক্ষা করবে, তোমার মুখ উজ্জ্বল করবে।

তুমি কি জানো, তোমার কলিগদের সাথে তোমার দুরত্ব কতটুকু? কেন এটা হয়েছে? এটার কোন ডাটা তোমার কাছে আছে কি? যদি না থাকে, তাহলে তুমি লিডার কিংবা শিক্ষক হিসাবে যোগ্য নও। রোজ তোমার অহেতুক বাজে আচরণ, কেয়ারলেস কার্যকলাপ আর গুরুত্বহীনতার কারণে এই দুরত্ব তৈরি হয়েছে, যা তোমার টিম বন্ডিং ও সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে। আর এই জন্য তোমার দুই হাজার লোকের ফ্যাক্টরী চালাতে জিএম/ডিজিএম/এজিএম/সিঃ ম্যানেজার/ম্যানেজার আরো কত কি লাগে! কারণ তোমার টিম মেম্বাররা মনযোগ দিয়ে বা ভালবেসে তোমার কাজটা করেনা, করলে তুমি ফ্রেসার দিয়েও চালাতে পারতে!

তাই পদ দিয়ে সম্মান আর সুবিধাকে বন্ঠন করোনা। সম্মান, কেয়ার, ভালবাসা, সুযোগ- সুবিধা এই শব্দগুলো সবার জন্য সমান রেখো, কথা দিলাম, তুমি প্রাপ্তিতে ভেসে যাবে।

Leave a Comment